বিদেশ থেকে কি জমি ক্রয় করা যায় ও প্রবাস থেকে জমি বিক্রয়ের পদ্ধতি
বিদেশ থেকে কি জমি ক্রয় করা যায় ও প্রবাস থেকে জমি বিক্রয়ের পদ্ধতি এই বিষয়গুলো নিয়েই আজকের আর্টিকেল। প্রবাস থেকে জমি বিক্রয়ের পদ্ধতি ও বিদেশ থেকে কি জমি ক্রয় করা যায় জানার জন্য সম্পূর্ন আর্টিকেলটি পড়ে নিন। তাহলে চলুন বিদেশ থেকে কি জমি ক্রয় করা যায় কিনা আলোচনা করা যাক।
বিদেশ থেকে কি জমি ক্রয় করা যায় ও প্রবাস থেকে জমি বিক্রয়ের পদ্ধতি। |
বিদেশ থেকে কি জমি ক্রয় করা যায় ও প্রবাস থেকে জমি বিক্রয়ের পদ্ধতি জানার পাশাপাশি বিদেশ থেকে জমি ক্রয় করার নিয়মসমূহও জানতে পারবেন।
সূচিপত্রঃ বিদেশ থেকে কি জমি ক্রয় করা যায় ও প্রবাস থেকে জমি বিক্রয়ের পদ্ধতি।
ভূমিকাঃ
আপনারা অনেকেই বিদেশ থেকে জমি কিনতে চান বা বিক্রয় করতে চান। সঠিক নিয়ম না জানার ফলে অনেকসময়ই বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় আপনাকে। এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি বিদেশ থেকে জমি ক্রয় বা বিক্রয় করার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন বিদেশ থেকে কি জমি ক্রয় করা যায় কিনা তা জানা যাক।
বিদেশ থেকে কি জমি ক্রয় করা যায়
প্রবাসে থাকাকালীন দেশে জমি ক্রয় করতে চাইলে নানা নিয়ম মেনে তারপরে জমি ক্রয় করতে পারবেন। আইন অনুযায়ী আপনি প্রবাস থেকেই জমি ক্রয় করতে পারবেন। এই জমি ক্রয় করতে কিছু ধাপ মেনে চলতে হবে সেগুলো হলোঃ
আপনাকে প্রথমে দেশের একট বিশ্বস্ত কাউকে আপনার পক্ষে কার্যক্রম করার জন্য আমোক্তার নিয়োগ করতে হবে। আপনার মনোনিত ব্যক্তি আপনার পক্ষ থেকে যা যা করবেন তাই করতে হবে।
প্রথমে একটি আইনজীবির কাছে গিয়ে জমি ক্রয়ের আমোক্তার নামা দলিল তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু তথ্যের প্রয়োজন হবে। তথ্যগুলো হল পাওয়ার দাতার নামটি কেন বিস্তারিত বিবরণ, পাওয়ার গ্রহিতার নাম ঠিকানা বিস্তারিত বিবরণ, জমির পরিমাণ,,অবস্থান, বিস্তারিত সব বিবরণ।
তারপর আমোক্তার নামা দলিল, পাওয়ার গ্রহিতার পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি পাওয়ার দাতা প্রবাসী ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে।
ডাক প্রাপ্তির পর পাওয়ার দাতাকে তার নিজের পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এই কাগজপত্র নিয়ে আপনি যে দেশে অবস্থান করবেন সে দেশে অবস্থানরত দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে যেতে হবে।
দূতাবাসে গিয়ে পাওয়ার দাতা একজন কাউন্সিলরের সামনে দলিলে স্বাক্ষর করতে হবে। সেখানকার প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করে পাওয়ার দাতা দলিলটি ডাক যোগাযোগের মাধ্যমে দেশে পাঠিয়ে দিবেন।
পাওয়ার গ্রহীতা ডাক হতে দলিলটি গ্রহণ করার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবেন। তারপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই দলিলটি পরীক্ষা করে সত্যায়িত করে দেবেন।
এরপর পাওয়ার গ্রহীতা দলিলটি নিয়ে ডিসি অফিসের রাজস্ব কার্যালয়ে যেতে হবে। সেখানে দলিলটিকে স্টাম্প করে একটি কপি সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করা হবে।
এরপর পাওয়ার গ্রহীতা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে জমিটি পাওয়ার অফ আর্ট নির দলিলের সর্তা অনুযায়ী সম্পত্তি হস্তান্তর বা ক্রয় করতে পারবেন।
এভাবেই একজন প্রবাসী বিদেশ থেকে জমি ক্রয় করতে পারবেন। বিদেশ থেকে কি জমি ক্রয় করা যায় কিনা আশাকরি বুঝতে পারলেন। প্রবাস থেকে জমি বিক্রয়ের পদ্ধতিসমূহ এইবার জানা যাক চলুন।
প্রবাস থেকে জমি বিক্রয়ের পদ্ধতি
অনেকেই প্রবাসে থাকাকালীন দেশের জমি বিক্রয় করতে চাই। এজন্য আইন অনুযায়ী আপনি প্রবাসে থেকে দেশের সম্পত্তি আপনি বিক্রয় করতে পারবেন। এই পদ্ধতিটি হলঃ
প্রথমে আপনাকে একজন আইনজীবীর নিকট যে আমোক্তার নামা তৈরি করতে হবে। এরপর আমোক্তার নামার দলিল তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে যেসব তথ্যের প্রয়োজন হবে সকল তথ্য ভালোভাবে দিতে হবে। পাওয়ার গ্রহীতার নাম ঠিকানা ইত্যাদি সবকিছু। জমির পরিমাণ অবস্থান ইত্যাদি সব ভালোভাবে বিস্তারিত দিতে হবে।
পাওয়ার অফ আর্টনির দলিল তৈরি করা হলে পাওয়ার গ্রহিত আর পাসপোর্ট সাইজের ছবি জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি দাঁতের প্রবাসী ঠিকানায় সকল তথ্য প্রেরণ করতে হবে।
ডাক প্রাপ্তির পর পাওয়ার দাতা কে তার নিজের পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এ সকল সব তথ্য নিয়ে আপনি যে দেশে বসবাস করেন সেদেশের বাংলাদেশের দূতাবাসে গিয়ে একজন কাউন্সিলরের সামনে স্বাক্ষর করতে হবে। সকল প্রয়োজনীয় কাজ শেষে দলিল কি ডাক যোগাযোগের মাধ্যমে দেশে আবার প্রেরণ করবেন।
এরপর পাওয়ার গ্রহীতা দলিলটি নিয়ে ডিসি অফিসের রাজস্ব কার্যালয়ে যেয়ে জমা দেবেন সেখান থেকে দলিল কি স্টাম্প করে রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করবেন। এরপর পাওয়া গ্রহীতা সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জমিটি পাওয়ার অব আর্টনিক দলিলের সত্যা অনুযায়ী হস্তান্তর করতে পারবে।
এভাবেই প্রবাস থেকে আপনি জমি বিক্রয় করতে পারবেন। প্রবাস থেকে জমি বিক্রয়ের পদ্ধতিসমূহ জানলেন এইবার বিদেশ থেকে জমি ক্রয় করার নিয়মগুলোও জেনে নিন।
বিদেশ থেকে জমি ক্রয় করার নিয়ম
আমাদের দেশের অনেক মানুষ প্রবাসে থাকে। যারা কষ্ট করে কিছু টাকা জমিয়ে তাদের দেশের মাটিতে জমি ক্রয় করতে চাই। সে ক্ষেত্রে তারা কিভাবে জমি ক্রয় করবে বিদেশ থেকে তার কিছু নিয়ম জানার বা মেনে চলার প্রয়োজন হয়ে থাকে নিয়ম গুলো হলো
আপনি যখন জমি ক্রয় করবেন তখন আপনি আপনার পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে আপনি যে জায়গায় জমি ক্রয় করবেন সেখানকার বর্তমান বাজারের মূল্য কেমন এ সকল বিষয়ে ভালো করে খোঁজখবর নেবেন।
অনেক সময় দেখা যায় দালালের মাধ্যমে জমি ক্রয় করা থেকে বিরত থাকবেন এজন্য আগে ভালো করে খোঁজখবর নিবেন। এক্ষেত্রে আপনার অর্থ বিফলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
জমি কেনার জন্য আপনার পরিবারে আত্মীয় স্বজনের বা আপনার বিশ্বস্ত কোন ব্যক্তিকে বাছাই করবেন এতে করে আপনার কোন ক্ষতি হবে না।
জমি বিক্রেতা ও দাতার কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে, জমি নিয়ে কোন বিরোধ মামলা বা ঝামেলা আছে নাকি সেদিকে ভালোভাবে কাল রাখতে হবে। যদি কোন ঝামেলা বা কিছুই না থাকে সবকিছু ভালোভাবে ঠিকঠাক থাকলে জমি ক্রয়ের উপযোগী হবে। এজন্য আপনি বিশ্বস্ত ব্যক্তি বেছে নেবেন যাতে আপনার কষ্টের টাকা বিফলে না যায়।
জমি ক্রয় করার জন্য সঠিক মূল্য নির্ধারিত হলে সে ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র লাগবে কাগজপত্র গুলো হলো জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট এর ফটোকপি, আর আপনার পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে।
এরপর আপনার বিশ্বস্ত ব্যক্তি একজন আইনজীবীকে ঠিক করবেন সে আইনজীবীর মাধ্যমে সমস্ত কাগজপত্র দলিল সম্পাদন করবেন ও উপস্থাপন করবেন।
তারপর যিনি জমি বিক্রয় করবেন তার সকল কাগজপত্র, জমির মালিকানা নকশা, নামজারি খতিয়ান ইত্যাদি যে সকল জমির কাগজপত্র লাগে সব কাগজপত্র অবশ্যই সঙ্গে আনতে হবে।
এরপর সব কাগজপত্র উপস্থাপনের পর দলিল লেখক আইনজীবী দলিল প্রস্তুত করে সম্পাদন করবেন এবং রেজিস্ট্রি অফিসের সাব রেজিস্টার বরাবর দলিল দাখিলার মাধ্যমে আপনার নামে জমি রেজিস্টার করবেন।
এভাবেই আপনি বিদেশ থেকে জমি ক্রয় করতে পারবেন। বিদেশ থেকে জমি ক্রয় করার নিয়ম জেনে নিয়েছেন এখন জানুন কিসের ভিত্তিতে বিদেশের মাটিতে থেকেও জমি রেজিস্ট্রেশন করা যায়।
কিসের ভিত্তিতে বিদেশের মাটিতে থেকেও জমি রেজিস্ট্রেশন করা যায়
একজন প্রবাসী তার পরিবারের জন্য বিদেশে থেকে কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে। হাজারো কষ্টের মাঝেও বিদেশের মাটিতে অবস্থান করে ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করার আশায় কষ্টের টাকা জমিয়ে অনেক প্রবাসী এখন তার দেশের মাটিতে জমি ক্রয় করে থাকে।
একজন মানুষ প্রবাসে বসবাস করার পরেও সে দেশের মায়া মহব্বত ফল দেশের মাটিতে একখন্ড জমি তার দেশে কেনার জন্য ইচ্ছা পোষণ করে থাকে। আর এজন্যই একজন প্রবাসী বিদেশে থেকেও তার দেশের মাটিতে জমি ক্রয় করতে চাই। আর এই জমি ক্রয় করার জন্য একটা ভিত্তির প্রয়োজন হয়।
তাই বিদেশ থেকে আপনি আমোক্তারনামা ও পাওয়ার অফ আর্টনি নিয়োগ করার মাধ্যমে এই ভিত্তির মাধ্যমে বিদেশের মাটিতে থেকেও জমি রেজিস্ট্রেশন করা যায়।
এভাবে আপনি বিদেশের মাটিতে থেকেও দেশের মাটিতে জমি ক্রয় করে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
কিসের ভিত্তিতে বিদেশের মাটিতে থেকেও জমি রেজিস্ট্রেশন করা যায় জানালাম আপনাদের এইবার জেনে নিন প্রবাসী থেকে কি জমি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যায় কিনা।
প্রবাসী থেকে কি জমি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যায়
একজন ব্যক্তির যদি প্রবাসী থেকেও তার দেশের জমি বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে চাই তাহলে সে প্রবাসে বসে থেকেও জমি বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে পারবে। এজন্য কিছু করণীয় মানতে হবে সেগুলো হলোঃ
প্রবাসে অবস্থানকারী ব্যক্তি তার দেশে থাকা একজন বিশ্বস্ত মানুষকে পাওয়ার অফ আর্টনি দলিলের মাধ্যমে ক্ষমতা প্রদান করবেন।
এরপর দেশের অবস্থানরত সম্পত্তির দলিল একজন আইনজীবির মাধ্যমে প্রস্তুত করে প্রবাসীরা তো ব্যক্তির কাছে বা ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে।
উক্ত দলিল যে সম্পত্তি হস্তান্তর হবে সে সম্পত্তির সকল কাগজপত্র যেমন খতিয়ান নাম্বার,, দাগ নাম্বার,, হোল্ডিং নাম্বার, মৌজার নাম, উপজেলার নাম, জমির পরিমাণ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্পষ্টভাবে সব কিছু উল্লেখ করতে হবে।
সাথে সাথে সব প্রেরণ করতে হবে এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তির পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি রাত যোগাযোগের মাধ্যমে প্রেরণ করতে হবে।
প্রবাসী থাকা ব্যক্তি উক্ত দলিল পাওয়ার পর নিজের সব কাগজপত্রের পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, এগুলো সব কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে উত্তর দেশের অবস্থানরত বাংলাদেশের দূতাবাসে গিয়ে উত্তর দলিলে সিগনেচার বা স্বাক্ষর করবে একজন কাউন্সিলর এর সামনে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পূর্ণ করে দাতা উক্ত দলিল টি ডাক যোগাযোগের মাধ্যমে পুনরায় দেশে আবার প্রেরণ করবে।
এরপর পাওয়ার গ্রহীতা উক্ত দলিলটি নির্ধারিত ডিসি অফিসের মন্ত্রণালয়ে দলিলটি নিয়ে যাবে তারপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দলিলটি সত্যায়িত করে নেবে।
পাওয়ার গ্রহীতা দলিলটি নিয়ে নির্ধারিত ডিসি অফিসের রাজস্ব কার্যালয় জামা প্রদান করবে। সেখান থেকে দলিলটি স্টাম্প করে এক কপি সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্টার অফিসে প্রেরণ করবে।
এরপর পাওয়ার গ্রহীতা তার প্রয়োজনীয় কাগজ সম্পন্ন করে সে তার ক্ষমতায় এই কাগজটি ব্যবহার করতে পারবে।
এভাবেই প্রবাসী থেকে জমি বিক্রয় বা হস্তান্তর করা যায়। প্রবাসী থেকে কি জমি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যায় কিনা ও বিদেশ থেকে কি জমি ক্রয় করা যায় কিনা সবই জানালাম আপনাদের।
পরিশেষেঃ বিদেশ থেকে কি জমি ক্রয় করা যায় ও প্রবাস থেকে জমি বিক্রয়ের পদ্ধতি
আশাকরি আপনারা প্রবাস থেকে জমি ক্রয় বা বিক্রয় এর সকল নিয়মকানুন বুঝতে পেরেছেন। এইরকম তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
জানবো আমরা ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url