চাঁদের বয়স আসলে কত
চাঁদের বয়স আসলে কত তা এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন। চলুন তাহলে চাঁদের বয়স আসলে কত তা জেনে নেই।
চাঁদের বয়স আসলে কত। |
চাঁদের বয়স আসলে কত
চাঁদের বয়স আনুমানিক ৪৩৫ কোটি বছর। এটি পৃথিবীর সৃষ্টির কিছু সময় পরে গঠিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, চাঁদ গঠনের সম্ভাব্য কারণ হলো এক বিশাল আকারের গ্রহাণু বা থিয়া (Theia) নামে পরিচিত একটি বস্তু পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষ করেছিল, যার ফলে পৃথিবীর উপকরণ থেকে চাঁদ সৃষ্টি হয়।
চাঁদের বয়স এবং গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আধুনিক গবেষণাগুলো বেশ জটিল এবং আকর্ষণীয়। বিজ্ঞানীরা মূলত চাঁদের পৃষ্ঠের শিলা এবং ধূলিকণার নমুনা বিশ্লেষণ করে এর বয়স নির্ধারণ করেছেন। এই নমুনাগুলো অ্যাপোলো মিশনের সময় সংগ্রহ করা হয়েছিল।
চাঁদের গঠন সম্পর্কে ধারণা
১। বৃহৎ সংঘর্ষ তত্ত্ব (Giant Impact Hypothesis) ঃ
* প্রায় ৪৩৫ কোপিরবছর আগে থিয়া নামক একটি মঙ্গল আকৃতির গ্রহাণু পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষ করে।
* এই সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীর বহির্ভাগের উপাদানগুলো মহাকাশে ছিটকে পড়ে এবং ধীরে ধীরে এসব উপাদান একত্রিত হয়ে চাঁদ তৈরি হয়।
২। অন্যান্য তত্ত্বঃ
* কিছু গবেষক মনে করেন চাঁদ পৃথিবীরই একটি অংশ যা কোনও বিশাল মহাজাগতিক ঘটনার কারণে পৃথক হয়ে যায়।
* আরেকটি তত্ত্ব হলো চাঁদ অন্য কোনও স্থান থেকে এসে পৃথিবীর মহাকর্ষের প্রভাবে আবদ্ধ হয়েছে।
বৈজ্ঞানিক প্রমাণঃ
* চাঁদের শিলাগুলোর বয়স ৪.৪ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন বছরের মধ্যে।
* চাঁদের পৃষ্ঠের ভূপৃষ্ঠীয় স্তর পৃথিবীর বহির্ভাগের সঙ্গে বেশ সাদৃশ্যপূর্ণ।
চাঁদের বয়সের গুরুত্বঃ
চাঁদের বয়স জানার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস, সৌরজগতের গঠন এবং প্রাথমিক অবস্থার পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন।
চাঁদের বিবর্তনঃ
চাঁদ তার গঠনের পর থেকে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়েছে। এর পৃষ্ঠে ক্রেটার, আগ্নেয়গিরির প্রমাণ এবং ভূত্বকের বিবর্তন চাঁদের ইতিহাসের বিভিন্ন ধাপ প্রকাশ করে।
১। প্রাথমিক গলিত অবস্থান (Magma Ocean Stage) ঃ
চাঁদের গঠন হওয়ার পর এটি একসময় পুরোপুরি গলিত অবস্থায় ছিল। ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে পৃষ্ঠে শক্ত স্তর তৈরি হয়।
২। ক্রেটার এবং সংঘর্ষের প্রভাবঃ
প্রাচীন সৌরজগত ছিল অস্থির, যেখানে গ্রহাণু এবং ধূমকেতুর আঘাতে চাঁদের পৃষ্ঠে প্রচুর ক্রেটার সৃষ্টি হয়।
৩। লুনার মেরিয়ার গঠনঃ
প্রায় ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন বছর আগে চাঁদের অভ্যন্তর থেকে গলিত লাভা বেরিয়ে আসায় এর পৃষ্ঠে মসৃণ এবং গাঢ় এলাকা (লুনার মেরিয়া) তৈরি হয়।
চাঁদের বয়স নির্ধারণে ব্যবহৃত প্রযুক্তিঃ
১। রেডিওমেট্রিক ডেটিংঃ
চাঁদের শিলা এবং ধূলিকণার রেডিওঅ্যাকটিভ আইসোটোপ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এর সঠিক বয়স নির্ধারণ করেন।
২। অ্যাপোলো মিশনঃ
১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে অ্যাপোলো মিশনের নভোচারীরা চাঁদ থেকে শিলা ও ধূলিকণা সংগ্রহ করে আনেন। এই নমুনাগুলোর বয়স প্রায় ৪.৪ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন বছর।
চাঁদের ভূতত্ত্বঃ
১। পৃষ্ঠের গঠনঃ
চাঁদের পৃষ্ঠ প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত:
* মারিয়া (Maria): মসৃণ, অন্ধকার এলাকা।
* টেরা বা হাইল্যান্ডস (Terra): উঁচু এবং বেশি আলোকিত এলাকা।
* চাঁদের পৃষ্ঠে সিলিকা, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসি এবং আয়রনের মতো উপাদান পাওয়া যায়।
চাঁদের গুরুত্বঃ
* পৃথিবীর প্রভাব: চাঁদ পৃথিবীর সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা নিয়ন্ত্রণ করে।
* মানব সভ্যতা: প্রাচীনকাল থেকে চাঁদ জ্যোতির্বিজ্ঞান, ক্যালেন্ডার এবং সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
* আধুনিক গবেষণা: চাঁদের ইতিহাস জানার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের গঠন এবং পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে পারেন।
চাঁদ শুধু পৃথিবীর একটি উপগ্রহ নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য এক অপার রহস্যের আধার।
জানবো আমরা ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url