সিঙ্গাপুরের টাকার নাম কী

সিঙ্গাপুরের টাকার নাম কী ও মুদ্রার ধরণ এবং সিঙ্গাপুর ডলার সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এই আর্টকেলে আলোচনা করবো আপনাদের সাথে। 
সিঙ্গাপুরের টাকার নাম কী। জানবো আমরা। janbo amra
সিঙ্গাপুরের টাকার নাম কী

সূচিপত্রঃ সিঙ্গাপুরের টাকার নাম কী

সিঙ্গাপুরের টাকার নাম কী

সিঙ্গাপুরের টাকার নাম সিঙ্গাপুর ডলার (Singapore Dollar)। সংক্ষেপে এটি SGD নামে পরিচিত। স্থানীয়ভাবে একে ডলার বা সিঙ্গাপুর ডলার বলা হয়। সিঙ্গাপুর ডলার (SGD) সিঙ্গাপুরের সরকার এবং সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ইস্যু করা একটি মুদ্রা। 

সিঙ্গাপুর ডলারের প্রতীক হলো $ এবং এটি S$ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হয়। এটি ১৯৬৭ সালে চালু হয় এবং বর্তমানে এটি ১০০ সেন্টে বিভক্ত। সিঙ্গাপুর ডলার কাগজের নোট এবং ধাতব মুদ্রা দুই ধরনের হয়। 

কাগজের নোটগুলিতে সিঙ্গাপুরের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ও স্থাপনার ছবি থাকে। সিঙ্গাপুর ডলার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম স্থিতিশীল মুদ্রা এবং এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

সিঙ্গাপুরের মুদ্রার ধরণ

কাগজের নোটঃ $2, $5, $10, $50, $100, $1,000 এবং $10,000।

ধাতব মুদ্রাঃ 1 সেন্ট, 5 সেন্ট, 10 সেন্ট, 20 সেন্ট, 50 সেন্ট এবং $1।

সিঙ্গাপুর ডলার প্রায়ই ব্রুনাই ডলারের সঙ্গে সমমূল্যে বিনিময়যোগ্য, কারণ এই দুটি দেশের মধ্যে একটি মুদ্রা বিনিময় চুক্তি রয়েছে।

সিঙ্গাপুর ডলার সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

১। ইতিহাস

ক. সিঙ্গাপুর ১৯৬৩ সালে মালয়েশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে মালয়েশিয়া ও ব্রুনাই ডলার ব্যবহার করত।
খ. ১৯৬৫ সালে স্বাধীন হওয়ার পর সিঙ্গাপুর নিজস্ব মুদ্রা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়।
গ. ১৯৬৭ সালে সিঙ্গাপুর ডলার প্রথম বাজারে আসে।

২। সিঙ্গাপুর ডলারের গুরুত্ব

ক. সিঙ্গাপুর ডলার এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা।
খ. এটি বিশ্বজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদেশি বিনিয়োগ, এবং পর্যটনের জন্য বহুল ব্যবহৃত।
গ. সিঙ্গাপুর ডলার আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে অনেক স্থিতিশীল।

৩। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা

ক. সিঙ্গাপুর ডলার পরিচালনা ও ইস্যু করার দায়িত্ব মুদ্রা কর্তৃপক্ষ সিঙ্গাপুরের (Monetary Authority of Singapore - MAS)।
খ. MAS সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪। মুদ্রার নকশা ও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য

ক. সিঙ্গাপুরের নোটগুলিতে উন্নত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকে, যেমন জলছাপ, রং পরিবর্তনশীল কালি এবং মাইক্রোপ্রিন্টিং।
খ. নোটগুলোতে সিঙ্গাপুরের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক চিত্র থাকে, যেমন স্কুল, ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, এবং উন্নত অবকাঠামো।

৫। বিনিময় হার

ক. সিঙ্গাপুর ডলারের বিনিময় হার অন্যান্য আন্তর্জাতিক মুদ্রার তুলনায় স্থিতিশীল।
খ. এটি ইউএস ডলার, ইউরো, পাউন্ড স্টার্লিং, এবং এশিয়ার অন্যান্য মুদ্রার সঙ্গে সরাসরি বিনিময়যোগ্য।

৬। ব্রুনাই ডলারের সঙ্গে চুক্তি

ক. ব্রুনাই ডলার (BND) এবং সিঙ্গাপুর ডলার ১:১ অনুপাতে বিনিময়যোগ্য।
খ. এই চুক্তি ১৯৬৭ সাল থেকে কার্যকর।

৭। বিশ্ব মুদ্রাবাজারে অবস্থান

ক. সিঙ্গাপুর ডলার আন্তর্জাতিকভাবে অন্যতম শক্তিশালী ও স্থিতিশীল মুদ্রা।
খ. বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন (Forex Market) অনুযায়ী, এটি বিশ্বের ১৩তম সর্বাধিক লেনদেনকৃত মুদ্রা।
গ. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এটি বিনিয়োগকারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

৮। মুদ্রার নোটগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য

সিঙ্গাপুর ডলার নোটের সিরিজ বর্তমানে ব্যবহৃত নোটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরিজ হলো Portrait Series, যা ১৯৯৯ সালে চালু করা হয়েছিল।

ক. প্রতিটি নোটে ড. ইয়ুসুফ বিন ইসহাকের (সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রেসিডেন্ট) প্রতিকৃতি রয়েছে।
খ. প্রতিটি নোটে বিভিন্ন থিম উপস্থাপিত হয়েছে:
গ. $2 নোট: শিক্ষা (স্কুল ও শিক্ষার্থীর চিত্র)
ঘ. $5 নোট: প্রকৃতি (গাছ ও পরিবেশ)
ঙ. $10 নোট: ক্রীড়া (জিমন্যাস্টিকস ও অ্যাথলেটিকস)
চ. $50 এবং $100 নোট: অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি

৯। ইলেকট্রনিক লেনদেন ও ডিজিটাল পেমেন্ট

সিঙ্গাপুর ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করছে।

ক. ইলেকট্রনিক পেমেন্টের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর ডলার বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করা হয়।

খ. PayNow, NETS, এবং QR Code পেমেন্ট সিঙ্গাপুরে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

১০। মুদ্রার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ক. সিঙ্গাপুর সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি গ্রহণে অগ্রসর।

খ. ডিজিটাল সিঙ্গাপুর ডলার চালুর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে।

গ. এটি সিঙ্গাপুরের ব্যাংকিং এবং ফিনটেক খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

১১। পর্যটকদের জন্য সুবিধা

ক. সিঙ্গাপুর ডলার সহজেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মুদ্রায় রূপান্তর করা যায়।

খ. পর্যটকদের জন্য দেশব্যাপী একাধিক মানি এক্সচেঞ্জ অফিস এবং ব্যাংক রয়েছে।

গ. অনেক দেশ সিঙ্গাপুর ডলারকে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সরাসরি লেনদেনে গ্রহণ করে, বিশেষত মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।

১২। আর্থিক স্থিতিশীলতা

ক. সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (MAS) মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং মুদ্রার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

খ. সিঙ্গাপুর ডলারের স্থিতিশীলতার কারণে এটি বিভিন্ন দেশের রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবেও ব্যবহৃত হয়।

সিঙ্গাপুর ডলার কেবল দেশটির আর্থিক উন্নয়নের প্রতীক নয়, এটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে অর্থনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের একটি মুদ্রা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জানবো আমরা ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url