মালয়েশিয়া কি সুন্নি ইসলাম ও ইসলামের ভূমিকা
মালয়েশিয়ায় ইসলাম মালয়েশিয়া কি সুন্নি ইসলাম ও মালয়েশিয়ায় ইসলামের ভূমিকাসমূহ এই আর্টিকেলে ব্যাখ্যা করবো আপনাদের সাথে।
মালয়েশিয়া কি সুন্নি ইসলাম ও মালয়েশিয়ায় ইসলামের ভূমিকা |
সূচিপত্রঃ মালয়েশিয়া কি সুন্নি ইসলাম ও মালয়েশিয়ায় ইসলামের ভূমিকা
মালয়েশিয়া কি সুন্নি ইসলাম
হ্যাঁ, মালয়েশিয়ার প্রধান ধর্ম সুন্নি ইসলাম। দেশটির অধিকাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠী
সুন্নি মতবাদ অনুসরণ করে এবং তারা শাফি মাজহাবের অনুসারী।
মালয়েশিয়ার সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তবে
দেশটিতে অন্যান্য ধর্মের চর্চার স্বাধীনতাও রয়েছে। মালয়েশিয়া একটি বহু-ধর্মীয় ও
বহু-সাংস্কৃতিক দেশ হলেও ইসলামের ভূমিকা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৬৩% মুসলিম, যার মধ্যে অধিকাংশ সুন্নি মতবাদ এবং শাফি
মাজহাব অনুসরণ করে। মালয়েশিয়ার সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা
হয়েছে, তবে অন্যান্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা
হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় ইসলামের প্রভাব
১। আইন ও প্রশাসনঃ
মালয়েশিয়ার আইনি কাঠামোতে শরিয়াহ আইনের ভূমিকা রয়েছে, তবে এটি মুসলিমদের
পারিবারিক, বিবাহ, এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে সীমাবদ্ধ। সাধারণ অপরাধ এবং
নাগরিক আইন ইংরেজি সাধারণ আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
২। শিক্ষা ও সংস্কৃতিঃ
ইসলামের শিক্ষা এবং সংস্কৃতি মালয়েশিয়ার দৈনন্দিন জীবনে গভীরভাবে প্রভাবিত।
ইসলামিক শিক্ষা এবং ধর্মীয় উৎসব যেমন ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা সরকারি ছুটি
হিসেবে পালিত হয়।
৩। রাজনৈতিক প্রভাবঃ
ইসলামের উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল যেমন পাস (Parti Islam Se-Malaysia)
কার্যক্রম চালায়। তারা শরিয়াহ আইন এবং ইসলামী মূল্যবোধ প্রচারের জন্য কাজ করে।
অন্যান্য ধর্মের অবস্থান
মালয়েশিয়ায় বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, হিন্দু, এবং অন্যান্য ধর্মের মানুষও রয়েছে। এই
ধর্মগুলোর অনুসারীরা তাদের নিজস্ব ধর্মাচারণে স্বাধীন। তবে, ইসলামিক মূল্যবোধ এবং
রীতিনীতি দেশটির প্রধান সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক নীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে।
মালয়েশিয়ায় ইসলামের ভূমিকা বিস্তারিত
১। ধর্মীয় গঠন
মালয়েশিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৬৩.৫% ইসলাম ধর্মাবলম্বী, যা দেশের বৃহত্তম ধর্ম।
অধিকাংশ মুসলমান সুন্নি মতবাদ অনুসরণ করেন এবং শাফি মাজহাব অনুযায়ী ধর্মীয়
আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন।
২। রাষ্ট্রধর্মের স্বীকৃতি
মালয়েশিয়ার সংবিধানের ৩(১) ধারা অনুযায়ী, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা
হয়েছে। যদিও ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম, সংবিধানে অন্যান্য ধর্ম পালনের স্বাধীনতাও
নিশ্চিত করা হয়েছে।
৩। শরিয়াহ আইন
মালয়েশিয়ায় শরিয়াহ আইন মুসলিম নাগরিকদের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
* ব্যাপ্তি: শরিয়াহ আইন মূলত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে সীমাবদ্ধ, যেমন বিবাহ,
তালাক, উত্তরাধিকার, এবং ধর্মান্তর।
* শরিয়াহ আদালত: এটি সাধারণ আদালতের পাশাপাশি কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে এর
বিচার ক্ষমতা মুসলিমদের নির্দিষ্ট বিষয় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।
৪। ইসলামিক প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান
মালয়েশিয়ার প্রতিটি রাজ্যে ইসলামিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আলাদা ইসলামিক
কাউন্সিল রয়েছে। এছাড়া, জাকাত (দান), ওয়াকফ (সম্পত্তি দান) এবং ধর্মীয় শিক্ষা
পরিচালনার জন্য আলাদা প্রশাসনিক ব্যবস্থা রয়েছে।
৫। ধর্মীয় শিক্ষা
ইসলামিক শিক্ষা মালয়েশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সরকারি স্কুলগুলোতে
ইসলামিক পড়াশোনা বাধ্যতামূলক মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের জন্য। পাশাপাশি, দেশটিতে
অসংখ্য ইসলামিক স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেমন:
* ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া (IIUM)
* অন্যান্য মাদ্রাসা এবং তাফসির কেন্দ্র।
৬। ধর্মীয় উৎসব ও ছুটি
মালয়েশিয়ায় ইসলামিক উৎসবগুলো বড় পরিসরে পালিত হয় এবং এগুলো সরকারি ছুটির দিন
হিসেবে গণ্য হয়।
* ঈদুল ফিতর (হারি রায়া পুয়াসা)
* ঈদুল আজহা (হারি রায়া হাজি)
* মাওলিদুন্নবী (পয়গম্বর মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন)
৭। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
ইসলামী মূল্যবোধ মালয়েশিয়ার সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কাঠামোতে গভীরভাবে প্রভাব
ফেলেছে।
* পোশাকের নিয়মাবলী: হিজাব এবং শালীন পোশাক মুসলিম নারীদের মধ্যে ব্যাপক
প্রচলিত।
* খাদ্য ও পানীয়: মালয়েশিয়ায় হালাল সার্টিফিকেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হালাল
খাবার দেশের প্রধান খাদ্য সরবরাহ চেইনে অন্তর্ভুক্ত।
৮। ইসলামিক ব্যাংকিং ও অর্থনীতি
মালয়েশিয়া ইসলামিক ব্যাংকিং এবং শরিয়াহ-ভিত্তিক অর্থনীতিতে একটি বৈশ্বিক নেতা।
* ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা সুদবিহীন লেনদেনের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়।
* মালয়েশিয়া সুকুক (ইসলামিক বন্ড) ইস্যু এবং ব্যবস্থাপনায় অন্যতম অগ্রণী দেশ।
৯। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বাধীনতা
ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হওয়া সত্ত্বেও বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মের
মানুষ তাদের নিজস্ব ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ভোগ করে। তবে কিছু ধর্মীয় বা
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
১০। ইসলামিক পুনর্জাগরণ আন্দোলন
মালয়েশিয়ায় ১৯৭০-এর দশক থেকে ইসলামিক পুনর্জাগরণ আন্দোলনের প্রভাব লক্ষ্য করা
যায়। এর ফলে ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং ইসলামী আচার-অনুষ্ঠানের চর্চা বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানবো আমরা ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url