সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রধর্ম কি ও সিঙ্গাপুরে ধর্মীয় অবস্থা
সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রধর্ম কি ও সিঙ্গাপুরে ধর্মীয় অবস্থা কেমন তা এই আর্টিকেলে
আলোচনা করতে যাচ্ছি চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
![]() |
সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রধর্ম কি ও সিঙ্গাপুরে ধর্মীয় অবস্থা |
সূচিপত্রঃ সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রধর্ম কি
সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রধর্ম কি
সিঙ্গাপুর একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং তাদের কোনো রাষ্ট্রধর্ম নেই।
সিঙ্গাপুরের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করে, এবং দেশটি বহু-ধর্মীয়
সহাবস্থানের জন্য পরিচিত।
সিঙ্গাপুরে প্রধান ধর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে বৌদ্ধধর্ম, খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম,
হিন্দুধর্ম, এবং তাওবাদ। সরকার সকল ধর্মকে সমানভাবে সমর্থন করে এবং ধর্মীয়
সহিষ্ণুতাকে উৎসাহিত করে। সিঙ্গাপুর একটি বহুজাতি এবং বহুধর্মীয় দেশ, যেখানে
জনগণের মধ্যে ধর্মীয় বৈচিত্র্য স্পষ্ট।
যদিও সিঙ্গাপুরের কোনো রাষ্ট্রধর্ম নেই, দেশটি তার সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে
সুরক্ষিত করেছে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং বিভিন্ন
সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।
সিঙ্গাপুরে ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে কিছু তথ্য
১। ধর্মীয় সংমিশ্রণ
সিঙ্গাপুরে চারটি প্রধান ধর্ম রয়েছে
বৌদ্ধধর্মঃ জনসংখ্যার বড় একটি অংশ।
ইসলামঃ প্রধানত মালয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত।
খ্রিস্টধর্মঃ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিস্তৃত।
হিন্দুধর্মঃ প্রধানত ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত।
তাওবাদ এবং কনফুসিয়ানিজমঃ চীনা সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত।
২। ধর্মীয় স্বাধীনতা
সংবিধানের ধারা ১৫ অনুসারে, প্রতিটি ব্যক্তি নিজের পছন্দমতো ধর্ম পালন, প্রচার
এবং প্রসারের অধিকার রাখে।
৩। ধর্মীয় স্থাপনাগুলো
সিঙ্গাপুরে মসজিদ, মন্দির, গির্জা এবং অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনার সহাবস্থান লক্ষ্য
করা যায়। উদাহরণস্বরূপঃ
ক. শ্রী মারিয়াম্মান মন্দির (সবচেয়ে পুরাতন হিন্দু মন্দির)
খ. সুলতান মসজিদ (প্রধান ইসলামিক কেন্দ্র)
গ. বৌদ্ধ টুথ রেলিক মন্দির
৪। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা প্রচার
সিঙ্গাপুর সরকার আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সহযোগিতা উৎসাহিত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।
"ইন্টার-রিলিজিয়াস অর্গানাইজেশন" (IRO) ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্ধনকে
শক্তিশালী করতে কাজ করে।
সিঙ্গাপুরের ধর্ম ও ধর্মীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য দেওয়া হলোঃ
ক. ধর্মীয় বৈচিত্র্য
সিঙ্গাপুরে জনগণের ধর্মীয় অনুসারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনুপাত রয়েছে। ২০২০
সালের আদমশুমারি অনুসারে:
বৌদ্ধধর্মঃ প্রায় ৩১.১%
খ্রিস্টধর্মঃ ১৮.৯%
ইসলামঃ ১৫.৬%
তাওবাদ/চীনা লোকধর্মঃ ৮.৮%
হিন্দুধর্মঃ ৫%
নির্ধারিত ধর্ম নেই (নাস্তিক বা অজ্ঞেয়বাদী): ২০%
খ. আইন ও ধর্ম
সিঙ্গাপুরের সংবিধান অনুযায়ীঃ
ধারা ১৫ঃ প্রতিটি ব্যক্তি নিজস্ব ধর্ম পালন, প্রচার এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান
পরিচালনার অধিকারী।
সরকার ধর্মীয় বিষয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয়
সমর্থন বা বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয় না।
গ. ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর বৈচিত্র্য
সিঙ্গাপুরে অনেক বিখ্যাত ধর্মীয় স্থাপনা আছে, যেমনঃ
সুলতান মসজিদঃ সিঙ্গাপুরের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ।
শ্রী মারিয়াম্মান মন্দিরঃ এটি সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে প্রাচীন হিন্দু মন্দির।
বৌদ্ধ টুথ রেলিক মন্দির ও মিউজিয়ামঃ চীনা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সেন্ট অ্যান্ড্রুজ ক্যাথেড্রালঃ এটি সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় গির্জা।
ঘ. ইন্টার-রিলিজিয়াস হারমনি
সিঙ্গাপুরের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি। এ
উদ্দেশ্যেঃ
* ইন্টার-রিলিজিয়াস অর্গানাইজেশন (IRO) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৪৯ সালে। এটি বিভিন্ন
ধর্মের নেতাদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করতে কাজ করে।
* "রেসিয়াল অ্যান্ড রিলিজিয়াস হারমনি অ্যাক্ট" নামে একটি বিশেষ আইন রয়েছে যা
ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ঙ. ধর্মীয় উৎসব
সিঙ্গাপুরে প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎসবকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। সরকারি
ছুটির দিনগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব অন্তর্ভুক্ত, যেমন:
- হরি রায়া পুয়াসা ও হরি রায়া হাজি (ইসলামিক উৎসব)
- দীপাবলি (হিন্দু উৎসব)
- চীনা নববর্ষ (চীনা বৌদ্ধ ও তাওবাদী সম্প্রদায়ের জন্য)
- গুড ফ্রাইডে ও ক্রিসমাস (খ্রিস্টধর্মের উৎসব)
চ. ধর্মীয় সংঘাতের অভাব
সিঙ্গাপুরে ধর্মীয় সংঘাত প্রায় নেই বললেই চলে। সরকার এবং জনগণ আন্তঃধর্মীয়
সহিষ্ণুতা বজায় রাখার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেয়। যে কোনো উসকানিমূলক মন্তব্য বা
কার্যক্রম কঠোরভাবে দমন করা হয়।
সিঙ্গাপুরে ধর্মের ভূমিকা শুধু ব্যক্তিগত বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি
সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক বন্ধনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর ফলে দেশটি একটি ধর্মীয়ভাবে
ভারসাম্যপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ এবং উদাহরণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
জানবো আমরা ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url