সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর উপায় বা নিয়ম
সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম বা উপায়গুলো এই আরর্টিকেলে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। সৌদি আরব গেলে এই বিষয়গুলো আপনার জানা না থাকলে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে পারেন।
সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর উপায় বা নিয়ম। |
সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর পদ্ধতি বা নিয়ম শুধু জানবেন তা কিন্তু না। পাশাপাশি সৌদি আরব থেকে বিকাশে বা ইসলামী ব্যাংকে ও বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পদ্ধতিসমূহও জানতে পারবেন।
সূচিপত্রঃ সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর উপায় বা নিয়ম
- সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর উপায় বা নিয়ম
- সৌদি আরব থেকে কি বিকাশে টাকা পাঠানো যায়
- সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর সুবিধা ও অসুবিধা
- সৌদি থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
- সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো সম্পর্কে বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর উপায় বা নিয়ম
সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর জন্য বিভিন্ন বৈধ ও সহজ পদ্ধতি রয়েছে। নিচে কয়েকটি পদ্ধতি উল্লেখ করা হলোঃ
১। ব্যাংক ট্রান্সফার
সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হলো ব্যাংক ট্রান্সফার।
পদ্ধতি
* সৌদি আরবে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে SWIFT কোড ব্যবহার করে টাকা বাংলাদেশে প্রাপকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো যায়।
* বাংলাদেশে প্রাপকের ব্যাংকের তথ্য (অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্যাংকের নাম ও শাখা) সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে।
২। মানি ট্রান্সফার সার্ভিস (Remittance Service Providers)
সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর জন্য রেমিটেন্স সার্ভিস ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রধান সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানঃ
- Western Union
- MoneyGram
- Xpress Money
- Ria Money Transfer
৩। মোবাইল ব্যাংকিং (Mobile Banking)
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে সরাসরি টাকা পাঠানো যেতে পারে।
* বিকাশ, নগদ, রকেট এর মতো সেবা গ্রহণ করা যায়।
পদ্ধতি
* সৌদি আরব থেকে রেমিটেন্স সরাসরি প্রাপকের মোবাইল অ্যাকাউন্টে পাঠানো যায়।
* রেমিটেন্স পার্টনার এজেন্টের মাধ্যমে মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে লেনদেন করতে হয়।
৪। অনলাইন মানি ট্রান্সফার প্ল্যাটফর্ম
* Wise (আগে TransferWise), Remitly, WorldRemit, বা Payoneer এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সহজেই টাকা পাঠানো যায়।
পদ্ধতি
* অ্যাকাউন্ট খুলে প্রাপকের ব্যাংক তথ্য বা মোবাইল নম্বর দিয়ে টাকা পাঠানো হয়।
৫। স্থানীয় এক্সচেঞ্জ হাউস
সৌদি আরবের বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে সরাসরি টাকা বাংলাদেশে পাঠানো যায়।
উদাহরণ
- আল-রাজি এক্সচেঞ্জ
- এনসিবি এক্সচেঞ্জ
- সৌদি পোস্ট
- তহউনীআত ব্যাংক
যা খেয়াল রাখবেনঃ
* বৈধ পদ্ধতিতে টাকা পাঠাতে হবে।
* প্রাপকের সঠিক তথ্য প্রদান নিশ্চিত করুন।
* কোনো প্রতিষ্ঠানের রেট ও ফি যাচাই করে লেনদেন করুন।
* রেমিটেন্স ইনসেনটিভ (বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অতিরিক্ত সুবিধা) পেতে ব্যাংক বা সেবা প্রদানকারীর সঙ্গে পরামর্শ করুন। সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর নিয়মগুলো দেখে নিলেন এইবার সৌদি থেকে বিকাশে টাকা পাঠানো যাবে কিনা তা জেনে রাখুন।
সৌদি আরব থেকে কি বিকাশে টাকা পাঠানো যায়
হ্যাঁ, সৌদি আরব থেকে বিকাশে টাকা পাঠানো যায়। সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য আপনাকে প্রবাস রেমিট্যান্স সেবা ব্যবহার করতে হবে। বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুনঃ
সৌদি আরব থেকে বিকাশে টাকা পাঠানোর পদ্ধতি
১। প্রবাসী রেমিট্যান্স পার্টনারঃ
সৌদি আরব থেকে বিকাশের অনুমোদিত রেমিট্যান্স পার্টনার যেমন ইনস্টারেম, মানি এক্সপ্রেস, রিায়াদ ব্যাংক, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, ইত্যাদির মাধ্যমে টাকা পাঠানো যায়।
২। অনলাইন অ্যাপ ব্যবহার করুনঃ
অনেক রেমিট্যান্স পার্টনারের নিজস্ব অ্যাপ বা ওয়েবসাইট রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে সরাসরি বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানো সম্ভব।
৩। তথ্য প্রয়োজনঃ
* প্রাপকের বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর।
* প্রাপকের পুরো নাম (জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী)।
* বিকাশের অনুমোদিত পার্টনারের মাধ্যমে প্রেরণ।
৪। সর্বনিম্ন চার্জঃ
রেমিট্যান্সের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ফি প্রযোজ্য হতে পারে।
৫। বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে প্রেরণ নিশ্চিতকরণঃ
টাকা পাঠানোর পর প্রাপক সহজেই তার বিকাশ অ্যাপে টাকা গ্রহণের নোটিফিকেশন পাবেন।
আপনার সুবিধার জন্য স্থানীয় রেমিট্যান্স এজেন্ট বা ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। সৌদি আরব থেকে কি বিকাশে টাকা পাঠানো যায় জেনে নিলেন এইবার জেনে নিন বিকাশের সাহায্যে টাকা পাঠালে কিরকম সুবিধা ও অসুবিদধা পাবেন।
সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর সুবিধা ও অসুবিধা
সৌদি আরব থেকে বিকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর সুবিধা ও অসুবিধা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
সুবিধাঃ
১। সহজ প্রক্রিয়াঃ প্রবাসীরা সহজেই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বা অনুমোদিত রেমিটেন্স পার্টনারদের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারেন।
২। দ্রুত লেনদেনঃ টাকা মুহূর্তেই বাংলাদেশে বিকাশ অ্যাকাউন্টে চলে যায়।
৩। নিরাপদ লেনদেনঃ বিকাশ এবং তাদের রেমিটেন্স পার্টনাররা নির্ভরযোগ্য হওয়ায় লেনদেন নিরাপদ।
৪। খরচ কমঃ অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় ট্রান্সফার ফি কম।
৫। নগদ উত্তোলন সহজঃ প্রাপক নিকটস্থ বিকাশ এজেন্ট থেকে টাকা তুলতে পারেন।
৬। ডিজিটাল ব্যবহারঃ টাকা পাঠানোর পাশাপাশি এটি ডিজিটাল পেমেন্টে ব্যবহার করা যায়।
৭। পার্টনারশিপঃ সৌদি আরবের বিভিন্ন ব্যাংক এবং রেমিটেন্স কোম্পানির সাথে বিকাশের চুক্তি রয়েছে, যা লেনদেনকে সহজ করে।
অসুবিধাঃ
১। সীমিত পার্টনার নেটওয়ার্কঃ সৌদি আরবে নির্দিষ্ট কিছু রেমিটেন্স পার্টনারের মাধ্যমেই লেনদেন করতে হয়।
২। ট্রান্সফার ফিঃ ছোট পরিমাণ টাকা পাঠালে ফি তুলনামূলক বেশি হতে পারে।
৩। ইন্টারনেট নির্ভরতাঃ অনলাইনে লেনদেন করার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন।
৪। লেনদেন সীমাঃ বিকাশ অ্যাকাউন্টে দৈনিক এবং মাসিক লেনদেনের সীমা রয়েছে।
৫। ভুল তথ্যঃ তথ্য ভুল হলে লেনদেন ব্যর্থ হতে পারে বা টাকার ফেরত পেতে দেরি হতে পারে।
৬। কাস্টমার সার্ভিসঃ সমস্যার সমাধানে কাস্টমার সার্ভিস সাপোর্ট কিছু সময় নিয়ে কাজ করে, যা ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে।
আপনি যদি সৌদি আরব থেকে বিকাশে টাকা পাঠানোর উপায় বা নির্দিষ্ট কোনো রেমিটেন্স পার্টনার সম্পর্কে জানতে চান, তা জানাবেন। সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর সুবিধা ও অসুবিধা জানলেন এখন জানা যাক ইসলামী ব্যাংকে কিভাবে টাকা পাঠানো যায়।
সৌদি থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
সৌদি আরব থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর জন্য সাধারণত রেমিট্যান্স সেবা ব্যবহার করা হয়। নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি দেওয়া হলোঃ
১। রেমিট্যান্স প্রোভাইডার নির্বাচন করুনঃ
সৌদি আরবে বিভিন্ন রেমিট্যান্স প্রোভাইডার রয়েছে, যেমনঃ
* ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন
* মানি গ্রাম
* ইনস্টারেম
* সৌদি আরবের স্থানীয় ব্যাংকের রেমিট্যান্স সেবা (যেমন, Al Rajhi Bank, Riyad Bank)
* এক্সপ্রেস মানি
২। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করুনঃ
ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত তথ্য দিতে হবেঃ
* প্রাপকের নাম (ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সাথে মিলে) ইসলামী ব্যাংকের নাম এবং শাখা
* প্রাপকের অ্যাকাউন্ট নম্বর
• SWIFT কোড (ইসলামী ব্যাংকের জন্য SWIFT কোড: ISLAMBDDHUQ)
৩। রেমিট্যান্স প্রক্রিয়ার ধাপঃ
ক. অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুনঃ
যদি আপনি রেমিট্যান্স প্রোভাইডারের অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করেন, তাহলেঃ
১। লগইন করুন বা অ্যাকাউন্ট খুলুন।
২। প্রাপকের তথ্য এবং ইসলামী ব্যাংকের তথ্য প্রবেশ করান।
৩। টাকার পরিমাণ এবং মুদ্রা (USD/BDT) নির্ধারণ করুন।
৪। ফি এবং এক্সচেঞ্জ রেট যাচাই করুন।
৫। পেমেন্ট নিশ্চিত করুন।
খ. লোকাল এজেন্টের মাধ্যমে পাঠানঃ
যদি রেমিট্যান্স প্রোভাইডারের লোকাল এজেন্ট ব্যবহার করেন
১। নিকটস্থ এজেন্ট অফিসে যান।
২। আপনার পরিচয়পত্র (Iqama/Passport) এবং প্রাপকের তথ্য দিন।
সৌদি থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়মও জানলেন এইবার এই আর্টকেল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর দেখা যাক চলুন।
সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো সম্পর্কে বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন এবং উত্তরঃ
১। সৌদি আরব থেকে বিকাশে টাকা পাঠাতে কত সময় লাগে?
উত্তরঃ টাকা পাঠানোর পদ্ধতির উপর নির্ভর করে সাধারণত ১ ঘন্টা থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে।
২। সৌদি আরব থেকে বিকাশে টাকা পাঠানোর খরচ কত?
উত্তর: প্রতিটি সার্ভিস প্রোভাইডারের চার্জ ভিন্ন হয়। সাধারণত ২-৩% ফি নেওয়া হয়।
৩। বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য কি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দরকার?
উত্তর: না, তবে বিকাশ অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক।
৪। বিকাশে রেমিট্যান্স গ্রহণ করার সীমা কত?
উত্তর: একদিনে সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা এবং মাসে ১,৫০,০০০ টাকা গ্রহণ করা যায়।
৫। বিকাশে রেমিট্যান্স গ্রহণের জন্য কি আলাদা অ্যাকাউন্ট দরকার?
উত্তর: না, সাধারণ বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই রেমিট্যান্স গ্রহণ করা যায়।
৬। বিকাশে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া কীভাবে মনিটর করা যায়?
উত্তর: প্রেরকের মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে লেনদেনের রসিদ এবং ট্র্যাকিং আইডি ব্যবহার করে মনিটর করা যায়।
৭। বিকাশের মাধ্যমে রেমিট্যান্স কি নগদ উত্তোলন ছাড়া ব্যবহার করা যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, রেমিট্যান্সের টাকা বিকাশের মাধ্যমে মোবাইল রিচার্জ, বিল পেমেন্ট বা অনলাইন কেনাকাটায় ব্যবহার করা যায়।
পরিশেষেঃ সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর উপায় বা নিয়ম
সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো সম্পর্কে আপনাদের সাথে কিছু উপায় শেয়ার করলাম আশাকরি আপনাদের উপকারে আসবে। এইরকম তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং আমাদের সার্ভিস সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
জানবো আমরা ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url