পাছায় ফোড়া হওয়ার কারণ ও যে ঔষধ খাবেন
ফোড়া হলে করণীয় পাছায় ফোড়া হওয়ার কারণ বা ফোড়া হওয়ার বিভিন্ন কারণসমূহ আপনাদের সাথে এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো।
![]() |
পাছায় ফোড়া হওয়ার কারণ ও ফোড়া হলে কি ঔষধ খাবো
|
সূচিপত্রঃ পাছায় ফোড়া হওয়ার কারণ ও ফোড়া হলে কি ঔষধ খাবো
পাছায় ফোড়া হওয়ার কারণ
পাছায় ফোড়া (Boil) সাধারণত চামড়ার নিচে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হয়। এটি
ব্যথাযুক্ত এবং ফোস্কার মতো দেখতে হয়। নিচে ফোড়া হওয়ার কিছু কারণ উল্লেখ করা
হলো:
পাছায় ফোড়া হওয়ার কারণ
১। ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: সাধারণত Staphylococcus aureus ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের
ফলে ফোড়া হয়।
২। ঘর্ষণ বা চুলকানি: ত্বকে চুলকানি বা ঘর্ষণ হলে সংক্রমণ হতে পারে।
৩। অতিরিক্ত ঘাম: ঘামে ভেজা ত্বক ব্যাকটেরিয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।
৪। বাধা সৃষ্টি হওয়া লোমকূপ: চুলের ফলিকল (Hair follicle) ব্লক হয়ে গেলে ফোড়া
তৈরি হতে পারে।
৫। দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: ডায়াবেটিস বা অন্যান্য রোগের কারণে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে ফোড়া হতে পারে।
৬। স্বাস্থ্যবিধির অভাব: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে ত্বকে ফোড়া হতে পারে।
৭। পুষ্টির অভাব: ভিটামিন ও খনিজের অভাব ত্বকের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রতিকার এবং চিকিৎসা
* আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার রাখুন।
* গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে ফোড়ার উপর ১৫-২০ মিনিট ধরে রাখুন। এটি ব্যথা কমাতে
এবং ফোড়ার পুঁজ বের হতে সাহায্য করে।
* ফোড়া ফাটানোর চেষ্টা করবেন না।
* যদি ফোড়া বড় হয় বা পুনরায় হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
* সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে (ডাক্তারের পরামর্শে)।
বিশেষ সতর্কতা: যদি ফোড়ার সাথে জ্বর, তীব্র ব্যথা, বা লাল দাগ চারদিকে ছড়িয়ে
পড়ে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। পাছায় ফোড়া হওয়ার কারণগুলো
জেনে নিলেন এখন ঔষধ সম্পর্কে জানা যাক চলুন।
ফোড়া হলে কি ঔষধ খাবো
ফোঁড়া হলে কি ঔষধ খাবো সেটা জানার আগে জানতে হবে ফোঁড়া কি।
ফোঁড়া (Boil) হলো ত্বকের একটি সাধারণ সংক্রমণ, যা সাধারণত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা
সৃষ্টি হয়। এটি একটি পুঁজযুক্ত ফোলা বা ঘা যা ত্বকের নীচে থাকে।
ফোড়া হলে চিকিৎসার জন্য প্রথমে সংক্রমণ কমানো এবং ব্যথা উপশম করার প্রয়োজন হয়।
তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ। সাধারণত ফোড়ার জন্য নিচের ধরণের
চিকিৎসা দেওয়া হতে পারেঃ
১। ব্যাথা ও ফোলাভাব কমানোর জন্য
* প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে।
২। সংক্রমণ প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক
* ফোড়ার আকার বড় হলে এবং সংক্রমণ বেশি হলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে।
সাধারণত ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর মধ্যে রয়েছে:
* Flucloxacillin
* Amoxicillin-Clavulanate
* Cefalexin
* যদি অ্যালার্জি থাকে তবে Erythromycin বা Clindamycin ব্যবহৃত হতে পারে।
৩। লোকাল ট্রিটমেন্ট
* উষ্ণ পানির সেঁক ব্যবহার করুন দিনে ৩-৪ বার। এটি ফোড়ার পুঁজ বের হতে সাহায্য
করে।
* সংক্রমিত স্থান পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন।
ফোড়ার জন্য প্রস্তাবিত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ:
১। Flucloxacillin
* ডোজ: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০০ মিলিগ্রাম দিনে ৪ বার (৫-৭ দিনের জন্য)।
* কার্যকারিতা: এটি ত্বকের সংক্রমণ দূর করতে কার্যকর।
২। Amoxicillin-Clavulanate
* ডোজ: ৬২৫ মিলিগ্রাম দিনে ৩ বার।
* কার্যকারিতা: এটি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে কার্যকর এবং জটিল সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত
হয়।
৩। Cefalexin
* ডোজ: ৫০০ মিলিগ্রাম দিনে ৩-৪ বার।
*কার্যকারিতা: ত্বকের সংক্রমণ ও ফোড়ার জন্য এটি একটি সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক।
8। Erythromycin (যদি পেনিসিলিন অ্যালার্জি থাকে)
* ডোজ: ২৫০-৫০০ মিলিগ্রাম দিনে ৪ বার।
* কার্যকারিতা: পেনিসিলিন অ্যালার্জি থাকলে এটি ব্যবহার করা হয়।
৫। Clindamycin
*ডোজ: ১৫০-৩০০ মিলিগ্রাম দিনে ৩-৪ বার।
* কার্যকারিতা: এটি গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ফোড়া হলে কি ঔষধ
খাবো তা দেখলেন এইবার ব্যথা ও ফোলা কমানোর ঔষধ এর নাম জেনে নিন।
ব্যথা ও ফোলাভাব কমানোর জন্য
* প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন: ব্যথা ও ফোলাভাব কমানোর জন্য কার্যকর।
* ডোজ: প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে ২-৩ বার।
স্থানীয় চিকিৎসা (টপিক্যাল মলম):
* Fucidin মলম: সংক্রমিত স্থানে সরাসরি প্রয়োেগ করতে পারেন।
* Mupirocin (Bactroban): ফোড়ার চারপাশে লাগালে সংক্রমণ কমে।
সতর্কতা:
* নিজে থেকে ফোড়া চেপে পুঁজ বের করার চেষ্টা করবেন না।
* কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নিজে থেকে না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
* যদি জ্বর, প্রচণ্ড ব্যথা বা ফোড়া বড় হয়ে যায় তবে দেরি না করে ডাক্তারের
সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ব্যথা ও ফোলাভাব কমানোর জন্য ঔষধ এর নাম জেনে নিলেন এখন ফোড়া শক্ত হলে করণীয় কি
তা জানুন।
ফোড়া শক্ত হলে করণীয়
ফোড়া শক্ত হয়ে গেলে এটি সাধারণত একটি সংক্রমণের ফলে হয়। এ ক্ষেত্রে সঠিক যত্ন
নেওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিছু করণীয় ধাপ:
১। উষ্ণ সেঁক দিন
একটি পরিষ্কার কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে ফোড়ার ওপর ১০-১৫ মিনিট ধরে রাখুন। এটি
ফোড়ার ভেতরের পুঁজ বের হতে সাহায্য করে।
২। এন্টিসেপ্টিক ব্যবহার করুন
ফোড়ার চারপাশে এন্টিসেপ্টিক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়।
৩। ফোড়া চেপে ধরবেন না
ফোড়া নিজে থেকে ফেটে গেলে পুঁজ বের হবে। জোর করে চাপ দিলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে
পারে।
৪। পরিষ্কার এবং শুকনো রাখুন
সংক্রমণের স্থান সব সময় পরিষ্কার এবং শুকনো রাখুন। নরম এবং ঢিলা কাপড় পরিধান
করুন।
৫। প্রচুর পানি পান করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান
শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে প্রচুর পানি পান করুন। ভিটামিন সি এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ
খাবার খান।
৬। ডাক্তারের পরামর্শ নিন
ফোড়া বড় হলে বা তীব্র ব্যথা হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। চিকিৎসক হয়তো
অ্যান্টিবায়োটিক বা বিশেষ চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন।
৭। পুঁজ বের করার চেষ্টা করবেন না
* অনেকেই ফোড়া চাপ দিয়ে পুঁজ বের করার চেষ্টা করেন, যা বিপজ্জনক। এটি সংক্রমণকে
আরও গভীরে ছড়িয়ে দিতে পারে।
* এ কাজটি শুধুমাত্র চিকিৎসকের মাধ্যমে নিরাপদ উপায়ে করা উচিত।
৮। ব্যথা উপশমের জন্য ওষুধ
* ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।
তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করবেন না।
৯। অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে
* ফোড়া যদি বারবার হয় বা বড় আকার ধারণ করে, তাহলে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক
প্রেসক্রাইব করতে পারেন।
* এটি সংক্রমণ পুরোপুরি নির্মূল করতে সহায়ক।
১০। ফোড়ার যত্ন নেওয়ার উপায়
* সংক্রমণের এলাকায় বারবার হাত না দেওয়া।
* আক্রান্ত অংশ ঢেকে রাখুন যাতে বাইরের ময়লা বা জীবাণু সংক্রমিত না হয়।
১১। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করুন
* প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন।
* ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার পরিহার করুন।
* রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ডায়াবেটিস থাকলে এটি ফোড়ার একটি
প্রধান কারণ হতে পারে।
১২। চিকিৎসকের কাছে কাটা বা ড্রেন করার প্রয়োজন হতে পারে
* ফোড়া যদি দীর্ঘদিন শক্ত থাকে এবং নিজে থেকে ফাটে না, তবে চিকিৎসক এটি কাটার
মাধ্যমে পুঁজ বের করে দিতে পারেন।
১৩। বাড়িতে তৈরিকৃত প্রাকৃতিক প্রতিকার
* হলুদের পেস্ট: হলুদ অ্যান্টিসেপটিক এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। পানি বা
দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ফোড়ার উপর লাগান।
* রসুন: রসুনের রস ফোড়ার ওপর লাগালে এটি দ্রুত শুকাতে সাহায্য করতে পারে।
১৪। ফোড়ার কারণ খুঁজে বের করুন
* যদি বারবার ফোড়া হয়, তাহলে রক্তপরীক্ষা বা অন্যান্য পরীক্ষা করে এটি কী কারণে
হচ্ছে তা নির্ধারণ করতে হবে।
* অপ্রয়োজনীয় স্টেরয়েড বা ইমিউন কমিয়ে দেওয়া ওষুধ সেবন করলে এটি হতে পারে।
যদি ফোড়ার সঙ্গে উচ্চ জ্বর, শরীরে দুর্বলতা, বা লিম্ফ নোড ফোলাভাব দেখা যায়,
তবে অবিলম্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। কারণ এটি একটি গুরুতর সংক্রমণের ইঙ্গিত হতে
পারে।
ফোড়া শক্ত হলে করণীয় ও ফোড়া হওয়ার কারণ সবই জানালাম এখন কিছু প্রশ্ন ও
উত্তর জেনে নিন চলুন।
পাছায় ফোড়া হওয়ার কারণ সম্পর্কে বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর
১। প্রশ্ন : ফোঁড়া কেন হয়?
উত্তর : ফোঁড়া সাধারণত Staphylococcus aureus ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এছাড়াও
চুলের ফলিকল ব্লক হওয়া, অতিরিক্ত ঘাম, এবং স্বাস্থ্যবিধির অভাব এটির কারণ হতে
পারে।
২। প্রশ্ন :ফোঁড়া কি ছোঁয়াচে রোগ?
উত্তর : ফোঁড়া নিজে ছোঁয়াচে নয়, তবে ফোঁড়া থেকে বের হওয়া পুঁজ বা তরল অন্য কারো
ত্বকে লাগলে সংক্রমণ হতে পারে।
৩। প্রশ্ন : ফোঁড়া কত দিনে সেরে যায়?
উত্তর : সাধারণত ফোঁড়া ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে নিজে সেরে যায়। তবে যদি বড়
হয় বা পুঁজ বের না হয়, তাহলে চিকিৎসার প্রয়োজন।
৪। প্রশ্ন : ফোঁড়া কি কেটে ফাটানো ঠিক?
উত্তর : না। ফোঁড়া নিজে নিজে ফাটতে দিন। কেটে ফাটানোর ফলে সংক্রমণ বাড়তে পারে।
৫। প্রশ্ন : ফোঁড়া থেকে জটিলতা হতে পারে কি?
উত্তর : হ্যাঁ, যদি ফোঁড়ার ঠিক মত চিকিৎসা করা না হয় তবে সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে
পড়তে পারে। এছাড়া ঘন ঘন ফোঁড়া হওয়ার কারণ বড় কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে। যেমন
ডায়াবেটিস।
জানবো আমরা ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url